জাতি জনগণনা নিয়ে বিপাকে কেন্দ্র

Entry Thumbnail
ফাইল চিত্র
Sujata Adhikari

দীর্ঘ সময় ধরেই জাতিগত সমীক্ষার দাবিতে সরব রাহুল-সহ বিরোধীদের একটি বড় অংশ। তাঁদের দাবি, দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বুঝতে, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রকৃত চিত্রটি ধরতে জাতিগত সমীক্ষা প্রয়োজন।  বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশে কাস্ট সেন্সাস (জাতি গণনা) নিয়ে শাসক এবং বিরোধী দলের মধ্যে নতুন করে টানাপোড়েন চলছে।এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে,স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের রাজনীতি জাতপাতের উপর ভিত্তি করেই আবর্তিত হয়েছে।আশির দশকের শেষ দিক এবং নবুইয়ের দশকের শুরুতে দেশে ধর্মীয় অর্থাৎ মন্দির রাজনীতির প্রবেশ ঘটলেও, জাতপাতের রাজনীতিকে একেবারেই উপেক্ষা করা যায়নি।মাঝে মণ্ডলে মাত হয়েছিল মন্দির রাজনীতি।ভারতীয় রাজনীতির এই ইতিহাস কারও অজানা নয়।এরপর গঙ্গাযমুনা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে।রাজনীতির বহু উত্থান কি পতন লক্ষ্য করা গেছে।২০১৪ সালে একেবারে নতুন স্লোগান ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় বসেন প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জাত-পাতের রাজনীতিকে অনেকটা স পিছনে ঠেলে দিয়ে নতুন স্লোগানকে সামনে রেখে দেশ পরিচালনা শুরু করেন।টানা দুই দফা ক্ষমতায় থেকে এখন তৃতীয় দফার ইনিংস শুরু করেছেন। অনেকেই ভাবতে শুরু করেছে যে,বিশাল ভারত হয়তো জাতপাতের রাজনীতি থেকে উর্ধ্বে উঠে,মোদির তোলা স্লোগান ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ এর সাথে চলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেটাই যে প্রকৃত সত্য নয়, তা আবার স্পষ্ট হয়ে উঠছে।গত বছর দুয়েক ধরেই দেশে ফের কাস্ট সেন্সাস অর্থাৎ জাতি গণনার বিষয়টি নিয়ে চাপানউতোর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আরও সহজভাবে বললে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীই নতুন করে দেশে জাতি গণনার দাবি তুলে সরব হয়েছে।এমনকি রাহুল গান্ধী ২০২৪ লোকসভা ভোটে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন, কংগ্রেস দল ক্ষমতায় এলে দেশে নতুন করে জাতি গণনা করাবেন বলে।নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি দল এবং এনডিএ সরকার জাতি গণনা নিয়ে বিরোধীদের তোলা এই দাবি নিয়ে আপত্তি থাকলেও, শেষে সুর নরম করেছে। বিজেপি হয়তো বুঝতে পেরেছে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে জাতপাতের রাজনীতি ও সমীকরণকে গুরুত্ব দিতেই হবে। ভারতীয় রাজনীতির মূলভিত্তিকে সরাসরি উপেক্ষা করে চলাটা আগামীদিনে বড়সর ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সর্বশেষ লোকসভার নির্বাচন এবং বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল, পদ্ম শিবিরকে পিছনে সরে আসতে বাধ্য করেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।খবরে প্রকাশ, এখন আরএসএসও চায় কাস্ট সেন্সাস।সেরকম ইঙ্গিত দিয়েছে সংঘ পরিবার। গত শনিবার থেকে কেরলের পালাক্কাড়ে শুরু হওয়া সংঘের সমন্বয় বৈঠক শেষে সোমবার আরএসএস জানিয়ে দিয়েছে, দেশে কাস্ট সেন্সাসে তাদের কোনও আপত্তি নেই।যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।এই প্রসঙ্গে আরএসএস-এর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, দেশে অনগ্রসর মানুষের উন্নতিকল্পে যে কোনও সিদ্ধান্তে তাদের কোনও আপত্তি নেই।বরং সমর্থন রয়েছে। তবে সংঘের প্রচার প্রমুখ সুনীল আম্বেদকর স্পষ্টভাবে বলেছেন, অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যু হলো ‘কাস্ট সেন্সাস’। তাই রাজনীতি কিংবা ভোটের সুবিধার জন্য কাস্ট সেন্সারকে ব্যবহার করা উচিত হবে না। জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রেও এই জাতিগত বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল।তাই সকলকে সতর্কতার সাথেই এই বিষয়ে এগোতে হবে।রাজনীতির ফায়দা তোলার জন্য কাস্ট সেন্সাসের দাবি করে এবং জাতিগত বিভাজনের চেষ্টা করা- একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনগ্রসর, পিছিয়ে থাকা জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকল্পে কাস্ট সেন্সাস ব্যবহার সর্বদাই সমর্থনযোগ্য।সংঘ পরিবারের এই বক্তব্যের পর গোটা দেশেই নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলেছে, বিরোধীদের বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর তোলা দাবিতে শেষ পর্যন্ত সিলমোহর দিতে চলেছে মোদি সরকার।তবে রাজনীতির পণ্ডিতদের একাংশের মতে, বিরোধীরা যে স্পর্শকাতর ইস্যুকে হাতিয়ার করে শাসক দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রাজনীতির ময়দানে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল, কৌশল করে বিরোধীদের সেই মোক্ষম অস্ত্রটাই এবার কেড়ে নিতে চলেছে গেরুয়া শিবির।দিনে দিনে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। তবে ভারতীয় রাজনীতির গতিমুখ যে ফের জাতপাতের অভিমুখে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

0 Comments

Leave a Comment