জিবিপি হাসপাতালে সাফল্যের সূচি

Entry Thumbnail
হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসকরা
Sujata Adhikari

 জিবিপি হাসপাতালে সাম্প্রতিককালে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। এতে বহিরাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। জিবিপি হাসপাতালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জিবিপি হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ শংকর চক্রবর্তী একথা বলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি উল্লেখযোগ্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মানুষের আস্থা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা তুলে ধরেন। সাংবাদিক সম্মেলনে নিউরোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাঃ আবির লাল নাথ বলেন গত দেড় বছরে নিউরোলজি বহির্বিভাগ চালু হবার পর ১০ শয্যা বিশিষ্ট পুরুষদের অন্তর্বিভাগ এবং ১০ শয্যা বিশিষ্ট মহিলাদের অন্তর্বিভাগ চালু হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের স্নায়ু রোগ সম্পর্কিত পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। যেমন- নার্ভ কন্ডাকশন ভেলোসিটি টেস্ট, ইএমজি টেস্ট, মায়াস্থেনিয়া গ্রেভিস রোগের সনাক্তকরণের লক্ষ্যে রিপিটিভ নার্ভ স্টিমুলেশন (আর এন এস টি) টেস্ট, অপটিক্যাল নার্ভের জন্য ভিসুয়াল ইভোকড পোটেনশিয়াল (ভিইপি) টেস্ট, এস এ এইচ সনাক্ত হলে ব্রেইনের ডিজিট্যাল সাবট্র্যাকসন এনজিওগ্রাফি অর্থাৎ ডিএসএ টেস্ট ইত্যাদি করা হচ্ছে। স্নায়ু রোগে চিকিৎসায় গত গত ৩১ মে ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ টা কয়েলিং, প্রায় ৩০০ টি ডিএসএ টেস্ট, ২০টি ব্রেনের স্ট্যান্টিং আয়ুষ্মান ভারত কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে করা হয়েছে।তিনি জানিয়েছেন যে বর্তমানে জিবিপি হাসপাতালে আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা ও মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। যেমন বহিরাজ্যে কয়েলিং করতে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়, স্ট্যান্টিং করতে পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকা খরচ হয়, আই ভি আই জি দিতে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা খরচ হয়। অথচ এখানে বিনামূল্যে সেসব করা যাচ্ছে।সাংবাদিক সম্মেলনে ডাঃ নাথ সাম্প্রতিককালে প্রিয়া দাস নামে ১৮ বছরের এক বিবাহিত মহিলার জীবন বাঁচানোর দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন খুব সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও তাকে কখনো অবহেলা করতে নেই। যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে আসা উচিত। এই প্রিয়া দাসের শুধুমাত্র মাথা ঘুরাতো এবং তিনি চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে কোয়াকের কাছে গেছেন এবং ছয় মাস সময় দেরি করে তিনি হাসপাতালে আসেন।সেখানে সিটিস্ক্যান করে এবং এনজিওগ্রাফি করে দেখা যায় তার যে রোগটা হয়েছে তার নাম হচ্ছে ‘অ্যানিউরিজম’ এবং তার ফলে মস্তিষ্কে ব্লাড ভেসেলগুলি বেলুনের মত ফুলে গিয়ে, সেগুলি ফেটে গেলে রোগীর জীবন সংশয় হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাকে কয়েলিং করে বাঁচানো সম্ভবপর হয়। ডাঃ আবির লাল নাথ জানান যে এই বিষয়গুলি যদি মানুষ সঠিক সময় জানতে না পারে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে না আসে তাহলে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে।তিনি আরও একটি ঘটনা তুলে ধরেন সেটা হল দিলীপ কর্মকার নামে এক ব্যক্তি যিনি গত ৩০ বছর যাবৎ ঘন ঘন ধূমপান করতেন এবং এর ফলে তার একটি আর্টারি বন্ধ হয়ে যায়। অপর আর্টারিটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। তাই জিবিপি হাসপাতালে জরুরী ভিত্তিতে তার ব্রেনে স্ট্যান্ট বসানো হয়।চোখের দৃষ্টি শক্তি চলে গেলে সেক্ষেত্রেও চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি স্নায়ু রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। অপটিক নিউরাইটিস হলে সেক্ষেত্রে ভিসুয়াল ইভোকড পোটেনশিয়াল (ভিইপি) টেস্টের মাধ্যমে চিকিৎসার সুফল লাভ করা যায়।নিউরোসার্জারি হেড অফ দ্যা ডিপার্টমেন্ট ডাঃ সিদ্দা রেড্ডি জানান ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে এ যাবৎ প্রায় ১৭০০ মেজর অপারেশন তিনি করেছেন, তার মধ্যে স্পাইনাল সার্জারিও রয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে আরও কিছু পরিষেবা এখানে চালু হবে যার ফলে ভবিষ্যতে নিউরো রোগীদের ক্ষেত্রে রেফারেল প্রবণতা কমে যাবে। নিউরোসার্জারিতে এখন ডাঃ সিদ্দা রেডি সহ তিন জন সার্জন রয়েছেন।এদিকে জিবি হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তর দিতে জানান খুব শীঘ্রই আইসিইউ পরিষেবা সম্প্রসারিত করা হবে। মেডিসিনে আই সি ইউ তে ছয়টা শয্যা বাড়ানো হবে, মেডিসিনের আরো আটটা শয্যা সেখানে যুক্ত হবে, সবমিলিয়ে ১৬ টি আই সি ইউ শয্যা বেড়ে যাবে ডিসেম্বর মাসে। যার ফলে রোগীদের অনেক সুবিধা হবে। এছাড়া তিনি সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে জানান স্ত্রী ও প্রসূতি, এবং মেডিসিন বিভাগের সম্প্রসারণের চিন্তাভাবনা রয়েছে। মেডিসিন এর ক্ষেত্রে একটি আলাদা ব্লক করার চিন্তাভাবনা চলছে। সব মিলিয়ে জিবিপি হাসপাতাল জনগণের আস্থা অর্জন করছে।সম্মেলনে ছিলেন জিবিপি হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ শংকর চক্রবর্তী, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিউরোলজি ডাঃ আবীর লাল নাথ, নিউরো সার্জারি হেড অফ দ্যা ডিপার্টমেন্ট ডাঃ সিদ্দা রেড্ডি, ডেপুটি মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ কনক চৌধুরী, ডেপুটি মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ অভিজিৎ সরকার প্রমুখ।

0 Comments

Leave a Comment