মা এবং সন্তান দু'জনের মৃত্যু

Entry Thumbnail
অভিযুক্তদের ছবি
Bikash Deb

দ্যা সোশ্যাল বাংলা , নিজস্ব প্রতিনিধি : মা এবং সন্তান দু'জনের মৃত্যু ! আবার নার্সিং হোমের বিল নাকি দেড় লাখ। এনিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যায় কৈলাসহরের ঊণকোটি নার্সিং হোমে। মৃতার নাম চন্দ্রাপতি হালাম। বাড়ি পানিসাগর চন্দ্ররাম পাড়ায়।

বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অমানবিক নিষ্ঠুর জঘন্যতম রুপ প্রকাশ্যে এলো। জনজাতি গর্ভবতী মহিলার সিজার করতে গিয়ে মৃত নবজাতকের প্রসবের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুর পর টাকা না দেওয়ায় দুই মৃতদেহ আটকে রাখে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে এই খবর চাউর হতেই সর্বত্র ছি: ছি: রব উঠছে। অবিলম্বে এই বেসরকারি হাসপাতালটি বন্ধের দাবী উঠছে। ঘটনা কৈলাসহরের ভগবান নগর এলাকায় অবস্থিত ঊনকোটি বেসরকারি হাসপাতালে। উত্তর জেলার পানিসাগর মহকুমার চন্দ্ররাম গ্রামের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর চন্দ্রবীর হালামের স্ত্রী চন্দ্রবতী হালাম সাম্প্রতিক কালে গর্ভবতী হবার পর উত্তর জেলার ধর্মনগরের সরকারি জেলা হাসপাতালে গিয়ে নিয়মিত ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেন। চলতি মাসের পাঁচ ডিসেম্বর চন্দ্রবতী হালামের অতিরিক্ত পেট ব্যাথার কারনে সেদিনই চন্দ্রবতী হালামকে ধর্মনগরের জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক চন্দ্রবতী হালামকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। চন্দবতি হালামের শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়াতে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা চন্দ্রবতী হালামকে আগরতলার জিবিতে রেফার করে দেয়। এবং চন্দ্রবতী হালামকে নিয়ে যথারীতি এম্বুলেন্স করে দুপুর দেড়টা নাগাদ জিবির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। যাওয়ার সময় চন্দ্রবতী হালামের শারিরীক অবস্থা আরও চূড়ান্ত খারাপ হওয়াতে তৎক্ষনাৎ পরিবারের সদস্যরা দুপুর দুইটা নাগাদ কৈলাসহরের ঊনকোটি বেসরকারি হাসপাতালে চন্দ্রবতী হালামকে ঢুকিয়ে দেয়। সাথে সাথেই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চন্দ্রবতী হালামের কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষা করে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় খুব শীঘ্রই অপারেশন করতে হবে। তানাহলে বাচ্চা মারা যেতে পারে। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই কথা শোনার পর চন্দ্রবতী হালামের পরিবারের সদস্যরা অপারেশন করতে রাজি হয়ে যান। যথারীতি অপারেশন শুরু হয়। বিকাল চারটা নাগাদ বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেওয়া হয় নবজাতক এবং চন্দ্রবতী হালাম দুইজনই মৃত। এই কথা শোনার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পরিবারের সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে পরিবারের সদস্যরা দুই মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন যে, চিকিৎসার খরচ দেড় লক্ষ টাকা হাসপাতালে জমা না দিলে মৃতদেহ দেওয়া হবে না। হত দরিদ্র অসহায় দিনমজুর চন্দ্রবীর হালাম সংজ্ঞাহীন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অনেক অনুরোধ করার পরও ঊনকোটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ পরিবারের সদস্যদের হাতে তোলে দিতে রাজি হন নি। পরবর্তী সময়ে দেড় লক্ষের বদলে ৬৫হাজার টাকা দাবী করে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দিনমজুর চন্দ্রবীর হালাম কিংবা পরিবারের সদস্যরা কোনো উপায় না পেয়ে পানিসাগরের চন্দ্ররাম গ্রামের মানুষদের খবর দেওয়ার পর প্রায় ৭০থেকে ৮০জন যুবক কৈলাসহরের ঊনকোটি বেসরকারি হাসপাতালে চলে আসে। উনারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করার পর নবজাতকের মৃতদেহ একটি কাগজের বাক্সে ঢুকিয়ে মৃতদেহটি দায়সারা ভাবে হাসপাতালের বারান্দায় রেখে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা ছাড়া চন্দ্রবতী হালামের মৃতদেহ দিতে রাজি হননি। ঊনকোটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই ব্যবহারে উপস্থিত যুবকরা উত্তেজিত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের দরজা জ্বানালায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। হাসপাতাল চত্বরে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হলে ঘটনাস্থলে কৈলাসহর থানার বিশাল পুলিশ এবং টি.এস.আর বাহিনী হাজির হয় এবং পরবর্তী সময়ে একপ্রকার নতজানু হয়ে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা ছাড়াই মৃতদেহ পরিবারের সদস্যদের হাতে তোলে দেন।

0 Comments

Leave a Comment